সাক্ষাৎকার গ্রহণ : মাহবুব মোর্শেদ
অমর
একুশে বইমেলার প্রেক্ষাপটে লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে কপিরাইট, রয়ালটি
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা ও তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে। এসব বিতর্কে একটি
বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, দেশে কপিরাইট ও রয়ালটি সংক্রান্ত আইনকানুন
বিষয়ে সামগ্রিক সচেতনতার বিশেষ অভাব আছে। এ প্রেক্ষাপটেই সমকাল কথা বলেছে
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার মনজুরুর রহমানের সঙ্গে। মনজুরুর
রহমানের জন্ম ৬ নভেম্বর ১৯৫৯ সালে, কিশোরগঞ্জে। ২০০৯ সাল থেকে তিনি
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব
পালন করছেন। কপিরাইট বিষয়ে তিনি আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি লেখালেখি করেন। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ
বিষয়ে তার একটি বই আগামী মেলায় প্রকাশিত হবে। কপিরাইট অফিসের কার্যক্রম,
মেধাস্বত্ব, রয়ালটি ইত্যাদি বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে
সমকাল
: বাংলাদেশে একটি কপিরাইট অফিস থাকা সত্ত্বেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে
অনেকেই জানেন না বা কপিরাইট আইন সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নন। কপিরাইট অফিস
কতদিন আগে কাজ শুরু করেছে?
মনজুরুর রহমান : কপিরাইট অফিস যাত্রা শুরু
করেছে ১৯৬২ সাল থেকে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে। তখন পুরনো আইনে চলত।
১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ আইন অনুসরণ করা হতো। পাকিস্তান আমলে কিছু কিছু
সংশোধন আনা হয়েছিল। ২০০০ সালে বাংলাদেশে নতুন আইন হয়েছে, বাংলাদেশ কপিরাইট
আইন নামে। ২০০৫ সালে এটি সংশোধন হয়েছে। ২০০৬ সালে আইন অনুসারে বিধিমালা
তৈরি হয়েছে। কপিরাইট অফিস এখন এই বিধিমালায় চলে। ২০১০ সালে আইন ও বিধিমালা
ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। আমাদের কপিরাইট আইন পৃথিবীর যে কোনো দেশের
কপিরাইট আইনের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম। ছোটখাটো ত্রুটি সত্ত্বেও এটি
বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য আইন। তবু এর ক্রমাগত সংশোধনের একটি প্রক্রিয়া
চলমান আছে।
সমকাল : কপিরাইট আইন ও বিধিমালার আওতায় কী কী পড়ে?
মনজুরুর
রহমান : সাহিত্য, চিত্রকলা, সঙ্গীত, ফটোগ্রাফি, অ্যাডভার্টাইজিং,
কম্পিউটার সফটওয়্যার থেকে শুরু করে যত ধরনের সৃজনশীল কাজ আছে তা এই আইনের
আওতায় আসবে। এসব ক্ষেত্রে যত ভায়োলেশন হতে পারে তা এই আইন ও বিধিমালার
দ্বারা প্রতিবিধান করা যাবে।
সমকাল : কপিরাইট আইনে কপিরাইট অফিসকে কি পুলিশিং অথরিটি দেওয়া হয়েছে?
মনজুরুর
রহমান : আমাদের সরাসরি পুলিশিং অথরিটি দেওয়া হয়নি। এই আইন অনুসারে একটি
কপিরাইট বোর্ড কাজ করে। এটি একটি কোয়াসি জুডিসিয়াল অফিস। কেউ যদি
রেজিস্ট্রেশন চায় তবে আমরা রেজিস্ট্রেশন করি। আমি রেজিস্ট্রার হিসেবে কারও
কপিরাইট দাবিকে রেজিস্টার করি। কারও কপিরাইট রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়ার দ্বারা
অন্য কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি কপিরাইট বোর্ডে আপিল করতে পারেন। কপিরাইট
বোর্ড অভিযোগ পেলে দু'পক্ষকে ডেকে শুনানি করে। কেউ যদি বোর্ডের সিদ্ধান্তে
দ্বিমত প্রকাশ করেন তবে তিনি আদালতে যেতে পারেন। এর বাইরে যদি কোনো
অন্যায় হয়, যেমন_ কোনো লেখকের বই যদি এখানে নকল হয় বা বিদেশি কোনো
প্রকাশনা যদি নকল হয় তবে বিক্ষুব্ধরা সরাসরি থানায় যাবে এবং মামলা হবে। সে
ক্ষেত্রে কোর্ট বিচার করে কপিরাইট আইন অনুসারে শাস্তি দেবেন।
টাস্কফোর্সের অপারেশনে এমন বহু পাইরেটেড বই আমরা উদ্ধার করেছি।
দেশি-বিদেশি বহু বই এখানে আইনবহির্ভূতভাবে পাইরেটেড হওয়ার নজির আছে। আমি
২০০৯ সালে এ অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের পর মোট ৯টি অপারেশন পরিচালনা করা
হয়েছে।
সমকাল : একজন শিল্পীর গান বা সিডি যদি পাইরেটেড হয়ে বাজারে চলে আসে তবে তার করণীয় কী?
মনজুরুর
রহমান : তিনি সরাসরি কোর্টে মামলা করতে পারেন। সত্যিকার অর্থে কপিরাইট কী
আমরা জানি না বা এ বিষয়ে সচেতন নই। একজন মানুষের দু'ধরনের সম্পদ আছে।
একটা বস্তুগত সম্পদ, আরেকটি মেধাসম্পদ। জমি, ঘর, বাড়ি, ব্যবসা, ব্যাংক
ব্যালান্স বস্তুগত সম্পদ। আর একজন শিল্পী-সাহিত্যিক-চলচ্চিত্র নির্মাতা যে
শিল্প-সাহিত্যকর্ম তৈরি করেন সেগুলো তার মেধাসম্পদ। মেধাসম্পদের দুটি দিক
আছে : একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ট, আরেকটি কালচারাল পার্ট। ইন্ডাস্ট্রিয়াল
পার্টের আওতায় আসে পেটেন্ট, ডিজাইন, ট্রেডমার্ক, জিওগ্রাফিক্যাল
ইন্ডিকেশন ইত্যাদি বিষয়। এটা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডমার্ক অফিস
দেখাশোনা করে। আর কালচারাল পার্টটা দেখাশোনা করে কপিরাইট অফিস। প্রেস
আবিষ্কারের পরপরই এ ধরনের আইনের উদ্ভব ঘটে। ঊনবিংশ শতকে গ্রামোফোন
কোম্পানিগুলো চালু হলে গানের ব্যাপারে আইন চালু হয়। একটি সৃষ্টিকর্ম,
যেমন_ গান, কবিতা, উপন্যাস, ছবি ইত্যাদি যদি শিল্পীর অনুমতি, স্বীকৃতি বা
তাকে যথাযথ ক্রেডিট না দিয়ে কোথাও ব্যবহৃত হয়, তবে তাতে শিল্পকর্মটির
স্রষ্টার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। কপিরাইটের দুটি দিক, একটি হলো_ অর্থনৈতিক
স্বার্থ, আরেকটি নৈতিক স্বার্থ। যখন কেউ একজন লেখকের লেখা কোথাও ব্যবহার
করবে তখন লেখকের নাম থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, লেখকের লেখা ব্যবহার করতে হলে
তা অবিকৃতভাবে করতে হবে। এগুলো মোরাল রাইটের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে
বাংলাদেশের আইনে একজন লেখক বা শিল্পী জীবিত অবস্থায় তার সৃষ্টিকর্মের
অর্থনৈতিক স্বত্ব তিনি আজীবন ভোগ করবেন। তিনি মারা গেলে তার
উত্তরাধিকারীরা ৬০ বছর পর্যন্ত স্বত্ব ভোগ করতে পারবেন। এটি অর্থনৈতিক
অধিকার। এ কারণেই নজরুলের লেখার স্বত্ব তার পরিবার এখনও ভোগ করতে পারছে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তার উত্তরাধিকারীরা
স্বত্ব আর ভোগ করতে পারছেন না। অর্থনৈতিক অধিকার সময়ের ব্যবধানে ফুরিয়ে
যেতে পারে; কিন্তু নৈতিক অধিকার কখনও শেষ হবে না। হোমারের লেখা হোমারের
নামেই, শেক্সপিয়রের লেখা শেক্সপিয়রের নামেই চলতে হবে। আমাদের দেশে এখনও
অনেকেই কপিরাইট বিষয়ে জানেন না, মানেনও না। এখানে মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা
আছে। লেখালেখি, আলোচনা, টক শো ইত্যাদির মাধ্যমে এ বিষয়গুলোতে সচেতনতা তৈরি
করতে পারলে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে আমি মনে করি।
সমকাল : একজন শিল্পী-সাহিত্যিক পাইরেসির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি কি কপিরাইট অফিসে আসতে পারেন?
মনজুরুর
রহমান : তিনি সরাসরি কোর্টে বা থানায় যেতে পারেন। কিন্তু কোর্টে বা থানায়
সুবিধা পেতে হলে তাকে কপিরাইট অফিসে কিছু কাজ করতে হবে। তাকে এখান থেকে
কপিরাইট সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। কপিরাইট সার্টিফিকেট থাকলে
সৃষ্টিকর্মের ওপর শিল্পী-সাহিত্যিকের অধিকার আইনগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা
সুবিধা হয়। সারা পৃথিবীতেই কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক নয়। আইনি
সুবিধা পেতে হলে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পাইরেসির কারণে কেউ
ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে সিভিল কোর্টে যেতে হবে অথবা শাস্তি দিতে হলে
ক্রিমিনাল কোর্টে যেতে হবে।
সমকাল : কোনো অ্যালবাম বা বইয়ের প্রকাশক
যদি শিল্পী-সাহিত্যিককে প্রাপ্য রয়ালটি না দেন তবে সে ক্ষেত্রে তিনি কী
করতে পারেন? এখানে কপিরাইট অফিসের ভূমিকা কী?
মনজুরুর রহমান :
এক্ষেত্রে আমাদের শিল্পী ও লেখকরা যে ভুলটা প্রথমেই করছেন তা হলো তারা
বইয়ের প্রকাশক বা অ্যালবামের প্রকাশকের সঙ্গে কোনো চুক্তি করছেন না।
কিন্তু বইয়ের পাণ্ডুলিটি প্রকাশকের হাতে তুলে দেওয়ার আগে চুক্তি করাটা
বাধ্যতামূলক। কপিরাইট আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুসারে এ চুক্তি হতে হবে এবং
তাতে লেখকের স্বাক্ষর থাকতে হবে। এবং লেখকের প্রাপ্য রয়ালটির হার, চুক্তির
সময়সীমা উলি্লখিত থাকতে হবে। এমন চুক্তি থাকে না বলেই সমস্যার উদ্ভব ঘটে।
আপনি দেখবেন, সমানে বহু বই অনূদিত হচ্ছে, সেগুলো বইমেলায় বাজারজাত হচ্ছে।
মেধা খরচ করে অনুবাদ করার পরও যদি ৫২ ধারার ব্যত্যয় ঘটে তবে সেটি বেআইনি হবে।
সমকাল : একজন লেখক যদি প্রকাশকের কাছ থেকে রয়ালটি দাবি করেন তবে আইনগতভাবে তাকে প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
মনজুরুর
রহমান : এটি না করা হলে প্রকাশক বলতে পারেন, লেখকের সঙ্গে আমার কোনো
চুক্তি ছিল না। কথা ছিল, আমি তাকে ১০ কপি বই দেব, তার সঙ্গে আমার আর কোনো
লেনদেন নেই। এরকম হচ্ছেও।
সমকাল : কপিরাইট অফিসের পক্ষ থেকে প্রকাশকদের চুক্তি করতে বাধ্য করার কোনো উপায় কি আছে?
মনজুরুর
রহমান : না। এটা আমরা করতে পারি না। যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি
কোর্টে না যাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কোনো উদ্যোগ নিতে পারি না। এর আগে
কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা আইন আমাকে দেয়নি।
সমকাল : অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কি প্রকাশকদের চুক্তি করতে বাধ্য করতে পারে?
মনজুরুর
রহমান : অন্য প্রতিষ্ঠানও বাধ্য করতে পারে না। তবে মানসিক চাপটা তৈরি করা
যায়। যেমন বইমেলা উপলক্ষে কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বইমেলা শুধু
প্রকাশক ও পাঠকের মেলা নয়, এটি লেখক-প্রকাশকের মেলা। একজন প্রকাশক কোনো
লেখকের বই প্রকাশ করে যদি তাকে রয়্যালটি না দেন তবে লেখককে রয়্যালটি পাইয়ে
দেওয়ার দায়িত্ব বোধহয় এখন আমাদের তৈরি হয়েছে। অন্যায় থেকে দূরে থাকার
জন্যই তো আমরা ভাষা আন্দোলন করেছিলাম। এখন এমন লেখকের দেখাও আমি পেয়েছি,
যিনি ১৫টি বইয়ের মধ্যে শুধু একটি বইয়ের রয়্যালটি পেয়েছেন। প্রশ্ন হলো,
তাহলে লেখক কি সারাজীবন বঞ্চিত হতেই থাকবেন? এটা তো হতে পারে না। আপনি
লিখিত চুক্তি করলে লেখককে রয়্যালটি দিতে বাধ্য থাকবেন। প্রকাশক কত কপি বই
প্রকাশ করলেন সেটি প্রেসের সার্টিফিকেটসহ লেখককে জানাবেন। বছরের শেষে কত
কপি বই বিক্রি হলো সে তথ্য জানাবেন। এগুলো যদি না করা হয় তবে লেখকের অধিকার
কীভাবে রক্ষিত হবে? এগুলো যতদিন পর্যন্ত মানা না হবে ততদিন পর্যন্ত
বঞ্চনা চলতে থাকবে। এ কারণে আমাদের দেশে প্রফেশনালিজম গড়ে ওঠে না। এদেশে
ক'জন লেখক আছেন যারা শুধু লিখেই জীবিকা নির্বাহ করেন? হাতেগোনা কয়েকজন।
অথচ লেখকরা যদি ঠিকমতো রয়্যালটি পেতেন তবে পরিস্থিতিটা অন্যরকম হতো।
লেখকদের এমন বঞ্চিত ও দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা আমাদের দেখতে হতো না।
সমকাল
: আমরা জেনেছি, বাংলা একাডেমী বইমেলায় স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম
করেছে। তারা কোনো প্রকাশনাকে স্টল দেওয়ার আগে লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের
চুক্তিপত্র জমা দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে।
মনজুরুর রহমান : এটা কী করেছে
বাংলা একাডেমী? আমি বইমেলা আয়োজক কমিটির একজন সদস্য। এই নিয়ম চালু করার
জন্য আমি বারবার অনুরোধ করে আসছি। কিন্তু আমার জানা মতে, এখনও এ ধরনের
কোনো নিয়ম চালু হয়নি। এটা করলে এক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হবে বলে আমি মনে
করি। এ বছর নিয়ম করলে আগামী বছরেই হয়তো পুরো সাফল্য আসবে না। কিন্তু
দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারে সাফল্য আসবে বলে আমার বিশ্বাস। বইমেলায় স্টল
বরাদ্দের আগে প্রকাশকের কাছে লেখকের সঙ্গে চুক্তিপত্র জমা দিতে বলবে। যেমন
বই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে জমা দিয়ে আইএসবিএন নম্বর নিতে হয় এবং সেই
নম্বরের রিসিট জমা দিতে হয় তেমনি কপিরাইট আইনের ১৯ ও ৫২ ধারা অনুসারে
লেখকের সঙ্গে চুক্তি বা অনুবাদকের সঙ্গে চুক্তির ফটোকপি একাডেমীকে জমা
দিতে হবে। খুব সহজেই এ নিয়ম চালু করা সম্ভব। এটা হলে প্রকাশকদের মধ্যে
একটা মানসিক চাপ তৈরি হবে, লেখকদের সঙ্গেও তার একটা স্বচ্ছ সম্পর্ক তৈরি
হবে।
সমকাল : লেখক-প্রকাশক চুক্তির কোনো খসড়া কি আপনাদের আছে?
মনজুরুর
রহমান : নেই। তবে বাংলা একাডেমী লেখকদের সঙ্গে যে চুক্তি করে সেটি মডেল
ধরে নিয়ে একটি চুক্তিপত্র তৈরি করা যেতে পারে। চুক্তি একটা বোঝাপড়া, সে
ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই শর্তগুলো নির্ধারিত হওয়া দরকার। তাকে
কপিরাইট আইনের ১৯ নম্বর ধারা অনুসরণ করা দরকার। আইনসম্মত চুক্তি না হলে সে
চুক্তি লেখক-প্রকাশকদের কাজে আসবে না। তবে চুক্তির প্রয়োজনীয়তা সর্বাগ্রে,
এটি না হলে লেখকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা আসলেই খুব কঠিন। পাশাপাশি এ কথাও
বলে রাখতে চাই, সব প্রকাশক খারাপ নন, অনেক সৎ প্রকাশক আছেন। তারা লেখকের
সঙ্গে চুক্তি করে, নিয়মিত রয়্যালটি পরিশোধ করেই ব্যবসা করছেন। এক্ষেত্রে
লেখকরা একদলে, প্রকাশকরা বিপরীত দলে, এমন বিবেচনার সুযোগ নেই। প্রকাশকদের
সমস্যার দিকেও আমাদের তাকাতে হবে। কিন্তু সবার উদ্দেশ্য হবে আইনসম্মত একটি
স্বচ্ছ ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
সমকাল : প্রকাশকরা অনেক সময় অভিযোগ করেন যে, বই বিক্রি হয় না বলে তারা লেখককে রয়ালটি দিতে পারেন না।
মনজুরুর
রহমান :এটি কোনো যুক্তি হতে পারে না। কোনো বই প্রকাশের আগে প্রকাশক যদি
বিচার করতে না পারেন বইটি চলবে কি-না তবে সেটি তার ব্যর্থতা। একটি বই যখন
প্রকাশিত হচ্ছে, তখন ধরেই নিতে হবে বাজারে বইটির চাহিদা বিষয়ে প্রকাশক
সচেতন। এবং সে সচেতনতার অংশ হিসেবে তাকে লেখকের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।
এরপর যদি বই বিক্রির ক্ষেত্রে তিনি সাড়া না পান তবে বুঝতে হবে তার বিপণন
ব্যবস্থায় দক্ষতার ঘাটতি আছে। তবে এ কথাও সত্য, বই বিক্রির ক্ষেত্র বাড়াতে
বইমেলার বাইরে আরও অনেক উদ্যোগ নিতে হবে।
সমকাল : আমরা আশা করব, লেখক-প্রকাশকরা কপিরাইট আইন, রয়ালটি ও চুক্তি বিষয়ে সচেতন হবেন। সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মনজুরুর রহমান : সমকালকেও ধন্যবাদ।