Wednesday, January 15, 2014

সৃজনশীল সাহিত্যগ্রন্থ প্রকাশে সমস্যা

- মাহফুজ সিদ্দিকী



মহান একুশে বইমেলা আসছে। সৃজনশীল গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা , ছড়া ও অনুবাদ গ্রন্থের মেলা বসবে। কিন্তু যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে সৃজনশীল সাহিত্যচর্চা ও সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশ বুঝি বন্ধই হয়ে যায়। দেখা যাচ্ছে, সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থ যেমন গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক, কবিতা ও অনুবাদ গ্রন্থ ইত্যাদির প্রতি সরকারের কোনো দরদ নেই; এসবের কোনো প্রয়োজন সরকার মনে করে না। কারণ সরকার ব্যস্ত শুধু পাঠ্যপুস্তক নিয়ে। সরকার সম্ভবত জানেই না যে, সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশে বিরাট বাধার সৃষ্টি হয়েছে। যে বাধা অতিক্রম করা সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।
আগে নিয়ম ছিল, ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং নিজ খরচায় যে কেউ গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ করতে পারবে। যেকোনো বাইন্ডিংখানায় বই বাইন্ডিং করাতে পারবে; যে কোনো লাইব্রেরিতে বইয়ের কপি দিতে পারবে বিক্রির জন্য। এখন সে নিয়ম মোটেই নেই। এখন যদি কেউ গল্প, উপন্যাস, নাটক বা কবিতার বই প্রকাশ করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই কোনো না কোনো রেজিস্টার্টড পাবলিশারের মাধ্যমে করতে হবে। ওই পাবলিশার যাকে দিয়ে ইচ্ছা বই বাইন্ডিং করাবে এবং যেভাবে খুশি বই বিক্রির ব্যবস্থা করবে। এখন শুধু তা-ই নয়, ওই পাবলিশারের অনুমতি ছাড়া কোনো বাইন্ডার বই বাইন্ডিং করবে না। কোনো লাইব্রেরিতে বই দেওয়া যাবে না বিক্রির জন্য। কোনো লাইব্রেরি নেবেও না বইটি। 
আগে রয়্যালটি প্রথা ছিল অর্থাৎ কারো বই পাবলিশার তার নিজের খরচে প্রকাশ করত। পা-ুলিপির বিনিময়ে কিছু অর্থ নগদ দিয়ে দিত; বাকি টাকা বই বিক্রি হওয়ার পরে দিত। এখন সে প্রথা নেই। এখন পাবলিশারকে গ্রন্থ প্রকাশের জন্য সব টাকা অগ্রিম প্রকাশকের হাতে তুলে দিতে হয়। লেখকের কোনো পরামর্শ বা কোনো অনুরোধের ধার পাবলিশার ধারে না। 
আগে একটি সৃজনশীল গ্রন্থ (১০ ফর্মা অর্থাৎ ১৬০ পৃষ্ঠা ) কর্ণফুলি সাদা কাগজে প্রকাশ করতে খরচ পড়ত ৫-৬ হাজার টাকা। স্বাধীনতার পর ৮০ দশকেও পড়ত ১৫-২০ হাজার টাকা। এখন ১৬০ পৃষ্ঠার একটি বই সাদা অফসেট কাগজে (কর্ণফুলি সাদা কাগজে বই ছাপা উঠে গেছে, সেখানে অফসেট কাগজ ব্যবহারের প্রচলন হয়েছে) ছাপতে খরচ পড়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। একটি বইয়ের দাম ধার্য হয় সর্ব নিম্ন ২০০ টাকা। 
আগে সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশে সরকারের সুদৃষ্টি ছিল, সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাও ছিল। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর পর্যন্তও সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশনার ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেখা গেছে। তখন এ ধরনের বই ছাপার কাগজের জন্য আবেদন করলে সরকার কম মূল্যে অর্থাৎ মিল রেটে কাগজ সরবরাহ করত। তাতে বাজার দরের তুলনায় অনেক কম দাম পড়ত কাগজের। ৭৪-৭৫ সালে আমার প্রথম গল্প গ্রন্থ 'প্রেম তুই সর্বনাশী' গ্রন্থ প্রকাশের ইচ্ছা করলে আমার আবেদনক্রমে সরকার আমাকে ১৯ রিম কর্ণফুলী সাদা কাগজ মিল রেটে সরবরাহ করেছিল। তাতে গ্রন্থ প্রকাশের খরচে আমার অনেক টাকার সাশ্রয় হয়েছিল। এখন সরকারের পক্ষ থেকে লেখকদের সে রকমভাবে কাগজ দেওয়ার সিস্টেম নেই। এখন কাগজ দেওয়া হয় না, সরকারি কোনো আর্থিক সাহায্যও লেখককে দেওয়া হয় না। এমনকি সৃজনশীল সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে কোনো খোঁজ খবর সরকার রাখা দরকার মনে করে না। 
পাকিস্তান আমলে সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। তখন বিএনআর-এ পান্ডুলিপি জমা দেওয়ার নিয়ম ছিল। পান্ডুলিপি মানসম্মত হলে বই তো ছাপা হতই, উপরন্তু পা-ুলিপির বিনিময়ে লেখককে নগদ অর্থ প্রদান করা হতো। বিএন আর-এর অফিস ছিল কার্জন হলের পূবে, ওসমানি উদ্যানের পশ্চিমে। লাল বিল্ডিংটিতে পরবর্তীকালে মন্ত্রী ফনিভূষণ থাকতেন। ওই বিএনআর-এ পা-ুলিপি জমা দিয়ে (১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে) আমি নগদ তখনকার দিনে আট হাজার টাকা পেয়েছিলাম। বিএনআর আমার বইও প্রকাশ করেছিল। এখন আর এ রকম সরকারি সহযোগিতার প্রথা নেই। 
সরকার শিক্ষার হার বাড়াতে চাচ্ছে। জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থ ছাড়া যে উদ্দেশ্য অপূর্ণ থেকে যাবে সেটা হয়তো সরকার উপলব্ধি করতে পারছে না। এটা সরকারের অদূরদর্শিতা। যার ফলাফল আখেরে ইতিবাচক হবে না। এক সময়ে সৃজনশীল সাহিত্য চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে; জাতি নিমজ্জিত হবে অন্ধকারে। কাজেই এ পরিণাম থেকে বাঁচতে হলে সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায় এবং সৃজনশীল গ্রন্থ রচনায় সরকারকে এগিয়ে আসতেই হবে। অর্থ, কারিগরি সব রকম সাহায্য সহযোগিতা সরকারকে অবশ্যই দিতে হবে। না হলে জাতির ইতিহাস কে লিখবে, সে ইতিহাস গ্রন্থ কিভাবে প্রকাশ পাবে সে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
আগে সরকার লেখককে বাঁচিয়ে রাখতে, লেখকের কলমকে চালু রাখতে, লেখকের চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতাকে লালন করতে লেখকের বই কিনে নিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পাবলিক লাইব্রেরি এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার বই কিনত। তাতে একজন লেখকের খুব একটা লোকসান হতো না। এখন সে নিয়ম উঠেই গেছে বলা চলে। শুধু মাত্র জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র মারফত কিছু বই কেনা হয় তাও পাবলিশারের কাছ থেকে। একজন লেখকের মাত্র ৫ কপি এবং একজন পাবলিশারের কাছ থেকে সর্বমোট ২৫ কপি নেওয়া হয়। কোনো লেখকের কাছ থেকে কোনো বই নেয়া হয় না। কারণ বই জমা দিতে একটি ফরম পূরণ করতে হয়। সে ফর্মে ট্রেড লাইসেন্স এবং ইনকামট্যাক্স প্রদানের পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়; তাছাড়া বই প্রকাশের বহুদিনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতে হয়; যা একজন লেখকের থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। কাজেই ধরে নেয়া যায় সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত কোনো লেখক তার গল্প গ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক বা কবিতার জন্য সরকারের কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। আর এ না পাওয়া জাতির জন্য সমূহ ক্ষতির কারণ। 
সরকার পাঠ্য পুস্তক ছাপার জন্য ছাপা,কাগজ, বাইন্ডিংসহ যাবতীয় খরচ দিয়ে থাকে। অথচ সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থের বেলায় সরকারের হাতের মুঠ খুলছে না; এ রহস্য আমাদের বোধগম্য নয়। এখনো আমরা বলব, জাতিকে শিক্ষিত উন্নত ও সমৃদ্ধ করে তুলতে সরকারকে সৃজনশীল সাহিত্য গ্রন্থের দিকে নজর দিতেই হবে; এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের কত অর্থ কত ভাবে ব্যয় হচ্ছে। কত অর্থ নষ্টও হচ্ছে। সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ থেকে কিছু পরিমাণ সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ধার্য্য রাখলে নিশ্চয়ই তাতে সুফল আসবে। অর্থও সদর্থে ব্যয় করা হবে। আমরা আশা করব, সরকার বিষয়টিকে সহৃদয় বিবেচনায় নেবে এবং সৃজনশীল সাহিত্য চর্চাকে বাঁচিয়ে রাখায় সচেষ্ট হবে। 
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আসছে, আসছে একুশে বইমেলা। এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর সময় এখনই।


Tuesday, January 7, 2014

জনপ্রিয় লেখক তৈরীতে আমাদের করণীয়

জনপ্রিয় লেখক তৈরীতে আমাদের করণীয়

শামীম রেজা

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশের বিখ্যাত দু’জন লেখকের নাম বলেন, আপনার মাথায় প্রথম যে দু’জন লেখকের নাম ভেসে উঠবে তারা হচ্ছেন হুমায়ূন আহম্মদ এবং জাফর ইকবাল। একটা সময় বাংলাদেশের বইয়ের দোকান গুলো ছিলো ভারতীয় লেখকদের দখলে। সম্ভবত শুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ এতই সাহিত্যপ্রেমী সেখানে বাস,ট্রেন,লঞ্চে গল্প-উপন্যাসের বই বিক্রি হয়। অথচ এই বাংলাদেশের মানুষই জিম্মি হয়েছিলো পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুঘেষা এবং ধর্মবিদ্বেষী লেখকদের কাছে।

বাংলাদেশের মানুষকে এই পশ্চিম বঙ্গীয় সাহিত্য থেকে টেনে এনে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের সাহিত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়ার একচেটিয়া কৃতিত্ব অবশ্যই হুমায়ূন আহম্মদের প্রাপ্য। তার পথচলায় অনুপ্রাণীত হয়ে আরো অনেক কথাসাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে এদেশে। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন হুমায়ূন আহাম্মদ নাস্তিক ছিলেন, হয়তো তাদের অভিযোগ সত্য অথবা মিথ্যা কিন্তু সেটা মূখ্য বিষয় নয়। হুমায়ূণ আহাম্মেদ সাহিত্য রচনা করেছিলেন এদেশের প্রেক্ষাপটে, মুসলিম পারিবারিক জীবন ছিলো তার লেখার উপজীব্য, এদেশের পাঠকের মনমানসিকতার দিকেও তিনি ছিলেন সজাগ দৃস্টির অধিকারী। তিনি তার সাহিত্যে ঢালাও ভাবে নাস্তিকতার প্রচার করেননি, যেটা করেছেন ভারতীয় লেখকরা। সেদিক থেকে হলেও, নাই মামার চেয়ে কানা মামা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি।

আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত বই রয়েছে, যেসব বইয়ের ঘাটতি আছে সেগুলো অনুবাদ করা হয়েছে। অভাব যেটা সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন ইসলামীক ভাবধারার গল্প-উপন্যাসের। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি, ইসলামীক গল্প-উপন্যাস লিখবেন এমন ভালোমানের সাহিত্যিক এদেশের সৃস্টি হচ্ছেনা কেনো? তাহলেই অনেকে রেডিমেইড উত্তর দিবেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। অথবা অন্য আরেকজন হয়তো জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে বলবেন ওই সব ডানপন্থী-বামপন্থী দেখে সাহিত্যিক সৃস্ট হয়না, সাহিত্য রচনা হচ্ছে জন্মগত প্রতিভা। যারা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কথা উল্লেখ করবেন তাদের যুক্তি হয়তো এমন হতে পারে, 'অন্য প্রকাশে'র মতো খ্যাতিমান প্রকাশনী সংস্থা আমাদের নাই। অথবা ভালোমানের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানও আমাদের নেই।

আমরা ডানপন্থী অঙ্গনে জনপ্রিয় উপন্যাস 'সাইমুম সিরিজে'র কথা উল্লেখ করতে পারি, কিন্তু জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে সেটা হুমায়ূন আহম্মদের 'মিসির আলী'র ধারের কাছেও নেই, এর কারণ কি? এটাকি শুধুমাত্র ভালোমানের পরিবেষক এবং প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের অভাবের কারণে! আসলে যুক্তিটা কতটুকু ধোপে টিকবে? আমরা সবাই সিএইচপি বা স্পন্দন অডিও ভিজ্যুয়াল সেন্টারের নাম জানি, তাদের ক্যাসেট বাংলাদেশের কয়টা দোকানে পাওয়া যায়? শতকরা হিসেব করলে বলা যায় অতি নগন্য। অথচ এই সিএইচপি যখন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মাহফিলের ক্যাসেট বাজারজাত করে তখন মানুষ লাইন করে সেই ক্যাসেট কিনে নিয়ে যায়। তার মানে বিষয় পরিস্কার, ‘অন্য প্রকাশ’ হুমায়ূন আহম্মদকে জনপ্রিয় করেনাই, বরং হুমায়ূন আহম্মদই ‘অন্যপ্রকাশ’কে জনপ্রিয়তার শিখড়ে নিয়ে গেছে। একজন পাঠক যখন বইয়ের দোকানে গিয়ে বলে আবুল আসাদের সাইমুম সিরিজ আছে? তখন দোকানদার তার দোকানে সাইমুম রাখতে বাধ্য হয়, এটাই নিয়ম।

ঘুরে ফিরে আবার একই প্রশ্ন এসে হানা দেয় তাহলে আমাদের দূর্বলতা কোথায়? আমাদের সাহিত্যকর্ম, যেমন সাইমুম সিরিজ এবং অনুবাদ সাহিত্য ক্রুসেড সিরিজ জনপ্রিয়তা পাচ্ছেনা কেনো? এখানে আমি দু’টি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসবো, একটা হচ্ছে আমরা পাঠক মন বুঝে সাহিত্য রচনা করিনা দুই হচ্ছে আমাদের মধ্যে লেখনি শক্তির অভাব।

হুমায়ূন আহম্মদকে আমরা নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করি, ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ূন আহম্মদের বিশ্বাস যাই হোকনা কেনো, একজন পাঠক অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে সার্চ না করলে তার লেখায় নাস্তিকতা খুজে পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার, কারণ তিনি মুসলিম পাঠকদের জন্য সাহিত্য রচনা করেছেন, উল্টাপাল্টা কিছু লিখলে পাঠক হারাতে হবে সেটা তিনি ভালো করেই জানতেন। 
অন্যদিকে আমরা যদি জাফর ইকবালের সাহিত্যের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো অনেকটা প্রকাশ্যেই তিনি তার উপন্যাসে নাস্তিকতার প্রচার করছেন, তারপরেও তার লেখার জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে তিনি পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। পাঠক সায়েন্স ফিকশন পড়তে চাচ্ছে, বাংলাতে বিকল্প ভালো মানের সায়েন্স ফিকশন না থাকাতে বাধ্য হয়ে একটু কনসিডার করে হলেও পাঠক তার সাহিত্যই গিলছে। 

এবার আসি আমাদের মানসম্পন্ন লেখকের অভাব প্রসঙ্গে, অতীতের কথা বাদ দিলেও এখন যদি আমরা অনলাইন জগতে ভালোমানের লেখকদের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে তাদের ৭৫% হচ্ছেন বাম ভাবধারার লেখক। এর কারণ কি? লেখকরা কি জন্ম থেকেই বাম হয়ে জন্মগ্রহণ করে? মূল সমস্যা হচ্ছে বাম অঙ্গনে সাহিত্যের যতটুকু চর্চা হয় তার তুলনায় আমাদের অঙ্গন ফাঁকা! আমরা সাহিত্য চর্চা করিনা এটাই হচ্ছে আসল কথা, যাও করি ব্যক্তিগত উদ্যগে দুই’চার লাইন লিখে একদিন হাওয়া। ফলশ্রুতিতে লেখা-লেখি যাদের রক্তে মিশে আছে এমন নিরপেক্ষ মনমানসিকতার তরুণ প্রজন্ম সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে, বামদের সংষ্পর্ষে নিজের অজান্তেই একজন চরমপন্থী বাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

লেখার মূল টপিক ছিলো, জনপ্রিয় লেখক তৈরীতে আমাদের করণীয়। উপরের আলোচনাতেই মূল বিষয়গুলো চলে এসেছে। নিজস্ব প্লাটফর্মে সাহিত্যচর্চার পরিবেশ সৃস্টি, উদীয়মান লেখকদের একই প্লাটফর্মে যুক্ত করা, সর্বোপরী প্রকাশনা সহ সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থা করা। একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, মায়ের গর্ভ থেকে কেউ উপন্যাসিক হয়ে জন্ম নেয়না, লিখতে লিখতেই লেখক। হয়তো আমাদের মধ্য হতেই বেরিয়ে আসবে যুগশ্রেষ্ঠ কোনো সাহিত্যিক, স্বপ্ন দেখতেতো পাপ নেই!

Source: Shamim Reja